Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
"SAFA DEEN: ইলমের আলোয় উদ্ভাসিত হোন, হিদায়াতের পথে এগিয়ে চলুন।"

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয আছে: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয আছে: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

ইসলাম সহজ ও সহনশীল ধর্ম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কোনো বান্দার জন্য অসহনীয় বোঝা চাপিয়ে দেন না। তাই শরীয়তে এমন কিছু পরিস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে রোযা রাখা কষ্টসাধ্য হলে বা নির্দিষ্ট কারণ থাকলে রোযা ভঙ্গ করা বৈধ। তবে কিছু ক্ষেত্রে শুধু পরে কাজা করতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হয় না।

এই পোস্টে কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো যে, কোন কোন কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয আছে এবং সেই অবস্থায় করণীয় কী।

১. অসুস্থতা (বেশি কষ্ট হলে বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে)

যদি কেউ এমন অসুস্থ হয় যে, রোযা রাখলে তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা সুস্থ হতে দেরি হয়, তাহলে সে রোযা ভঙ্গ করতে পারে। পরে সুস্থ হলে তাকে রোযার কাজা করতে হবে।

কুরআন: “আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনে (রোযা পূরণ করুক)।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)

হাদিস: আনাস (রাঃ) বলেন,

“রাসূল ﷺ বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য রোযা ভঙ্গ করা এবং অর্ধেক সালাত (কসর) করার অনুমতি দিয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম: ১১২১)

শর্ত:

যদি রোযার কারণে অসুস্থতার বাড়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোযা না রাখা বা ভেঙে ফেলা জায়েয।

সুস্থ হলে সেই রোযা কাজা করতে হবে।

২. সফর (মুসাফির হলে)

ভ্রমণকালীন যদি রোযা রাখা কষ্টকর হয়, তবে সফররত ব্যক্তি রোযা ভেঙে দিতে পারে বা রাখতে নাও পারে। পরে সুযোগমতো এই রোযাগুলোর কাজা করতে হবে।

কুরআন: “আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনে (রোযা পূরণ করুক)।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)

হাদিস:

যাবির (রাঃ) বলেন, “একবার রাসূল ﷺ সফর করছিলেন। কিছু লোক রোযা রাখেনি, আবার কিছু লোক রোযা রেখেছিল। যারা রোযা রাখেনি, রাসূল ﷺ তাদের প্রশংসা করলেন এবং বললেন: ‘তারা দুর্বলদের সাহায্য করেছে।’” (সহিহ মুসলিম: ১১১৯)

শর্ত:

সফর সাধারণত ৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে রোযা ভাঙার অনুমতি রয়েছে।

যদি রোযা রাখা কষ্টকর না হয়, তাহলে রাখা উত্তম। তবে ভাঙলেও সমস্যা নেই, পরে কাজা করতে হবে।

৩. গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারী (যদি শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে)

যদি কোনো গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মা মনে করেন যে রোযা রাখলে তার বা তার শিশুর ক্ষতি হতে পারে, তবে সে রোযা না রেখে পরে কাজা করতে পারে।

হাদিস:

নবী ﷺ বলেছেন: “আল্লাহ রোযার ক্ষেত্রে মুসাফিরের জন্য ছাড় দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণী নারীর জন্যও।” (সুনান আবু দাউদ: ২৪০৮, সুনান তিরমিজি: ৭১৫)

শর্ত:

যদি কষ্ট হয় বা শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোযা না রেখে পরে কাজা করলেই হবে।

৪. চরম ক্ষুধা বা তৃষ্ণায় মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে

যদি কেউ চরম ক্ষুধা বা তৃষ্ণার কারণে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে, তবে সে রোযা ভেঙে দিতে পারে।

কুরআন: “আল্লাহ তোমাদের জন্য ধর্মে কোনো কঠিনতা সৃষ্টি করেননি।”

(সূরা আল-হাজ্জ: ৭৮)

শর্ত:

সত্যিকার অর্থেই জীবন রক্ষার প্রয়োজন হলে রোযা ভাঙা জায়েয। কিন্তু পরে সেই রোযার কাজা করতে হবে।

৫. জোরপূর্বক বা বাধ্য করা হলে

যদি কেউ প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয় বা জোরপূর্বক রোযা ভাঙতে বাধ্য করা হয়, তবে সে রোযা ভেঙে দিতে পারে।

কুরআন: “যে ব্যক্তি ঈমান আনার পরও (বাধ্য হয়ে) কুফরি করে, তবে তার কোনো গুনাহ নেই, কিন্তু যে স্বেচ্ছায় কুফরি করে, সে আল্লাহর গজবের শিকার হবে।” (সূরা আন-নাহল: ১০৬)

শর্ত:

যদি সত্যিকার অর্থেই বিপদের মুখে পড়তে হয়, তাহলে রোযা ভাঙা জায়েয। কিন্তু পরে সেই রোযার কাজা করতে হবে।

৬. মহিলাদের মাসিক (হায়েজ) ও প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাব (নিফাস)

মাসিক ও নিফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য রোযা রাখা হারাম। তারা রোযা ভেঙে দিতে পারে বা না রাখতে পারে। পরে কাজা করতে হবে।

হাদিস:

আয়েশা (রাঃ) বলেন, “আমরা (মহিলারা) মাসিক অবস্থায় রোযা না রেখে পরে কাজা করতাম, কিন্তু সালাত কাজা করতাম না।” (সহিহ বুখারি: ১৯৫১, সহিহ মুসলিম: ৩৩৫)

শর্ত:

মাসিক বা নিফাস অবস্থায় রোযা রাখা নিষেধ।

পরে সেই রোযার কাজা করতে হবে।

কাজা ও কাফফারার বিধান

উপসংহার

রোযা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তবে আল্লাহ বান্দার জন্য সহজতাও রেখেছেন। যদি কেউ অসুস্থ, মুসাফির, গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী, মাসিকপ্রাপ্ত, চরম ক্ষুধার্ত বা বাধ্য হয়, তবে সে রোযা ভেঙে দিতে পারে। তবে পরে কাজা করা ফরয।

আমরা যেন ইসলামের নিয়ম মেনে রোযা পালন করি এবং যাদের জন্য রোযা রাখা কষ্টকর, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাই। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে রোযা পালন ও বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন!