Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
"SAFA DEEN: ইলমের আলোয় উদ্ভাসিত হোন, হিদায়াতের পথে এগিয়ে চলুন।"

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না – কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না – কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা : রোযা (সিয়াম) ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি কেবল খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মসংযমের এক মহৎ প্রশিক্ষণ। অনেক সময় কিছু বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় যে, এগুলো রোযা ভঙ্গ করে কি না। কুরআন ও হাদিসের আলোকে, নিচে এমন কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো যা রোযা ভঙ্গ করে না।

১. ভুলবশত কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলা

প্রমাণ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যদি কেউ ভুলে খায় বা পান করে, তাহলে সে তার রোযা পূর্ণ করবে। কারণ, এটি আল্লাহ তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।” (বুখারি: ১৯৩৩, মুসলিম: ১১৫৫)

➡ অর্থাৎ, কেউ যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে মনে পড়ার সাথে সাথে মুখ পরিষ্কার করে রোযা চালিয়ে যেতে হবে।

২. মিসওয়াক বা টুথব্রাশ ব্যবহার করা

প্রমাণ:

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন: “আমি যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে প্রত্যেক ওযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (বুখারি: ৮৮৭, মুসলিম: ২৫২)

➡ মিসওয়াক বা ব্রাশ করা রোযার মধ্যে জায়েজ, তবে টুথপেস্ট ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন কিছু গলায় চলে না যায়।

৩. ইনজেকশন নেওয়া (যা খাদ্য বা পানীয় নয়)

➡ পুষ্টিকর নয় এমন ইনজেকশন, যেমন ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তবে গ্লুকোজ বা নিউট্রিশন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

হাদিস:

শাইখ ইবনে উথাইমিন (রহ.) বলেন: “যে ইনজেকশন খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, তা রোযা ভঙ্গ করবে। তবে সাধারণ ওষুধের ইনজেকশন রোযা নষ্ট করবে না।” (ফিকহুস সিয়াম, পৃষ্ঠা: ২২৮)

৪. কাজের প্রয়োজনে ধুলা, ধোঁয়া বা ধূপ গ্রহণ করা

➡ রাস্তার ধুলা বা রান্নার ধোঁয়া যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে-মুখে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ধূপ বা সুগন্ধি টানা যাবে না।

হাদিস:

ইমাম নববি (রহ.) বলেন: “ধুলা, মশার ধোঁয়া বা রান্নার বাষ্প অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে-মুখে প্রবেশ করলে রোযা নষ্ট হবে না।” (আল-মাজমু, ৬/৩৪৪)

৫. কান বা চোখের ড্রপ ব্যবহার করা

➡ চোখের বা কানের ড্রপ রোযা নষ্ট করে না, যদি তা গলায় পৌঁছে না যায়।

ফতোয়া:

শাইখ ইবনে বায (রহ.) বলেন: “চোখের ওষুধ, কানের ড্রপ এবং নাকে ওষুধ ব্যবহার করা জায়েজ, তবে কিছু গলায় চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে।” (মাজমু ফাতাওয়া: ১৫/২৬০)

৬. রক্ত বের হওয়া বা রক্তদান করা

➡ যদি কেউ দুর্ঘটনায় কেটে যায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে রক্ত দেয়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না, তবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

ফতোয়া:

শাইখ ইবনে উথাইমিন (রহ.) বলেন: “সাধারণ রক্ত নেওয়া বা রক্তদান করা রোযা নষ্ট করবে না, তবে হিজামা (পশ্চাৎ চোষণ) করা থেকে বিরত থাকা ভালো।” (ফিকহুস সিয়াম, পৃষ্ঠা: ২৩৫)

৭. বৃষ্টি বা গোসলের পানি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় চলে যাওয়া

➡ যদি কেউ ভুলবশত গোসলের সময় পানি গিলে ফেলে, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না।

হাদিস:

রাসূল (সা.) বলেছেন: “ওযু করার সময় ভালোভাবে কুলি করো, তবে রোযাদার হলে গলায় পানি না পৌঁছায়।” (আবু দাউদ: ২৩৬০, তিরমিজি: ৭৮৭)

➡ অর্থাৎ, রোযা থাকা অবস্থায় সতর্ক থাকতে হবে, তবে ভুলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না।

৮. সুরমা, তেল, ক্রিম বা সুগন্ধি ব্যবহার করা

➡ সুরমা, তেল বা লোশন ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হয় না। তবে সুগন্ধি সরাসরি নাকে টেনে নেওয়া উচিত নয়।

ফতোয়া:

শাইখ ইবনে বায (রহ.) বলেন: “সুরমা, ক্রিম, তেল বা সুগন্ধি ব্যবহার রোযা ভঙ্গ করে না, তবে আতর সরাসরি নাকে নেওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।” (মাজমু ফাতাওয়া: ১৫/২৬০)

উপসংহার

✅ রোযা আল্লাহর জন্য, তাই ভুল করে কিছু খেলে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হয় না।

✅ কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি (যেমন ইনজেকশন) যদি পুষ্টি প্রদান না করে, তাহলে তা রোযা নষ্ট করবে না।

✅ ধূলা, ধোঁয়া, আতর বা টুথব্রাশ ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হয় না, তবে সতর্ক থাকতে হবে।

আশা করি, এই ব্যাখ্যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আপনাকে উপকৃত করবে। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে রোযা পালনের তাওফিক দান করুন!