Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
"SAFA DEEN: ইলমের আলোয় উদ্ভাসিত হোন, হিদায়াতের পথে এগিয়ে চলুন।"

রোযার শর্তসমূহ: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা

রোযার শর্তসমূহ: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা রোযা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরয। তবে কোনো ইবাদত শুদ্ধভাবে সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। রোযার ক্ষেত্রেও কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে, যা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

নিম্নে রোযার শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

রোযার শর্তসমূহ

রোযার শর্ত দুই প্রকার:

১. ওয়াজিব হওয়ার শর্ত (যাতে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক হয়)।

২. শুদ্ধ হওয়ার শর্ত (যাতে রোযা সহিহ বা গ্রহণযোগ্য হয়)।

প্রথমত: রোযা ওয়াজিব হওয়ার শর্তরোযার শর্তসমূহ:

যে সকল মুসলমানের উপর রোযা ফরয, তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবে:

১. ইসলাম গ্রহণ করা (মুসলিম হওয়া)

রোযা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য ফরয। কোনো অমুসলিম যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তার উপর রমযানের রোযা পালন করা আবশ্যক হবে।

২. প্রাপ্তবয়স্ক (বালিগ) হওয়া

রোযা প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের উপর ফরয। শিশুদের উপর ফরয নয়, তবে ছোটবেলা থেকেই তাদের রোযার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা উচিত।

হাদিস:

রাসূল ﷺ বলেছেন: “কলম তিন ব্যক্তির থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে: (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগে, (২) শিশু যতক্ষণ না প্রাপ্তবয়স্ক হয়, (৩) মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যতক্ষণ না সুস্থ হয়।” (সুনান আবু দাউদ: ৪৪০৩, সুনান তিরমিজি: ১৪২৩)

৩. বিবেকবান ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া

যারা মানসিকভাবে অসুস্থ বা অজ্ঞান অবস্থায় থাকে, তাদের উপর রোযা ফরয নয়।

৪. সক্ষম হওয়া (শারীরিক ও মানসিকভাবে রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা)

যদি কেউ দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা বৃদ্ধ বয়সের কারণে রোযা রাখতে অক্ষম হয়, তবে সে রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া (প্রত্যেক রোযার জন্য একজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান) দিতে পারে।

আল্লাহ বলেন: “আর যারা রোযা রাখার সামর্থ্য রাখে না, তারা ফিদইয়া হিসেবে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)

৫. মুকীম (নিজ শহরে থাকা, মুসাফির না হওয়া)

মুসাফির (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশি ভ্রমণে থাকা ব্যক্তি) চাইলে রোযা রাখতে পারে, আবার পরেও কাজা করতে পারে।

আল্লাহ বলেন: “আর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে, সে যেন পরে অন্য দিনে (রোযা পূরণ করে)।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)

৬. মহিলাদের ক্ষেত্রে হায়েয ও নেফাস থেকে মুক্ত থাকা

ঋতুবতী (হায়েযগ্রস্ত) এবং সন্তান জন্মদানের পর নেফাসকালীন মহিলাদের জন্য রোযা রাখা হারাম। তবে পরে কাজা করতে হবে।

হাদিস: “আমাদের (মহিলাদের) উপর যখন হায়েয আসত, তখন আমাদেরকে রোযার কাজা আদায় করতে বলা হতো, কিন্তু নামাযের কাজা আদায় করতে বলা হতো না।”

(সহিহ মুসলিম: ৩৩৫)

দ্বিতীয়ত: রোযা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত

রোযা শুধুমাত্র তখনই শুদ্ধ হবে, যখন নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ করা হবে:

১. নিয়ত করা

রোযার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। ফরয রোযার জন্য ফজরের আগে নিয়ত করতে হয়, আর নফল রোযার জন্য দিনের মধ্যেও নিয়ত করা যায়।

হাদিস:

রাসূল ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযার নিয়ত করবে না, তার রোযা নেই।” (সুনান আবু দাউদ: ২৪৫৪, সুনান তিরমিজি: ৭৩০, সহিহ ইবন মাজাহ: ১৭০০)

২. সুবহে সাদিক (ফজরের পূর্বে) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা

রোযার সময় পানাহার ও যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ বলেন: “তোমরা সুবহে সাদিকের উদয় পর্যন্ত পানাহার করতে পারবে, এরপর রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)

৩. রোযা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বেঁচে থাকা

ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার, পানি, ধূমপান বা স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভেঙে যাবে। এছাড়া, পেছনে কথা বলা, গীবত, মিথ্যা বলা, খারাপ কাজ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

হাদিস:

রাসূল ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে না, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই যে সে শুধু খাবার ও পানি ত্যাগ করল।” (সহিহ বুখারি: ৬০৫৭)

৪. সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা অব্যাহত রাখা

রোযা সময়মতো ইফতার করতে হবে।

হাদিস:

রাসূল ﷺ বলেন: “মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতারে দ্রুততা করবে।” (সহিহ বুখারি: ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম: ১০৯৮)

রোযার শর্ত লঙ্ঘিত হলে করণীয়

অনিচ্ছাকৃত ভুলে কিছু খেলে বা পান করলে রোযা ভাঙবে না।

হাদিস: রাসূল ﷺ বলেন: “যদি কেউ ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে, তবে সে যেন রোযা পূর্ণ করে, কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা।” (সহিহ বুখারি: ১৯৩৩, সহিহ মুসলিম: ১১৫৫)

ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভঙ্গ করলে কাজা ও কাফফারা দিতে হবে।

কাজা: একদিনের রোযা কাজা রাখতে হবে।

কাফফারা: ৬০ দিন একটানা রোযা রাখা অথবা ৬০ জন গরিবকে খাওয়ানো। (সহিহ মুসলিম: ১১১১)

উপসংহার

রোযা হলো তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তবে এটি শুদ্ধভাবে পালন করতে হলে এর শর্তগুলো মানতে হবে। ইসলাম, বালেগ হওয়া, সক্ষমতা থাকা ইত্যাদি শর্ত পূরণ হলে রোযা ফরয হয়। আবার, নিয়ত, পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং সংযম বজায় রাখার মাধ্যমে রোযা শুদ্ধ হয়।

আমরা যেন কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী রোযার শর্ত মেনে সঠিকভাবে পালন করতে পারি, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন!