রোযার নিয়ত: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
নিয়ত (ইচ্ছা বা সংকল্প) ইসলামের যে কোনো ইবাদতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রোযার ক্ষেত্রেও নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত হলো অন্তরের ইচ্ছা, যা মুখে উচ্চারণ করা বা না করলেও চলে। কুরআন ও হাদিসে নিয়তের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিক নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
নিয়তের গুরুত্ব কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা বলেন: “তারা শুধু এই আদেশই পেয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে…” (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে, যা নিয়তের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়।
নিয়তের গুরুত্ব হাদিসের আলোকে
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে।” (সহিহ বুখারি: ১, সহিহ মুসলিম: ১৯০৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রোযাসহ সকল ইবাদতের সাফল্য নির্ভর করে নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর।
রোযার নিয়ত সম্পর্কিত বিধান
১. ফরয রোযার জন্য নিয়ত করার সময়
রমযানের রোযা, কাজা রোযা বা কাফফারার রোযার জন্য ফজরের আগেই নিয়ত করা আবশ্যক।
হাদিস:
রাসূল ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযার নিয়ত করবে না, তার রোযা নেই।” (সুনান আবু দাউদ: ২৪৫৪, সুনান তিরমিজি: ৭৩০, সহিহ ইবন মাজাহ: ১৭০০)
এর দ্বারা বোঝা যায়, ফরয রোযার জন্য ফজরের আগে নিয়ত করাই শর্ত।
২. নফল রোযার জন্য নিয়ত করার সময়
নফল রোযার ক্ষেত্রে ফজরের পরও নিয়ত করা যায়, যদি সে ফজরের পর কিছু না খায় বা পান না করে।
হাদিস:
আয়েশা (রাঃ) বলেন, “একদিন নবী ﷺ আমার কাছে এলেন এবং বললেন: ‘তোমাদের কাছে কোনো খাবার আছে?’ আমরা বললাম: না। তখন তিনি বললেন: ‘তাহলে আমি রোযা রাখলাম।’”
(সহিহ মুসলিম: ১১৫৪)
এটি প্রমাণ করে যে, নফল রোযার জন্য ফজরের পরও নিয়ত করা বৈধ।
রোযার নিয়ত করার পদ্ধতি
নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্প। তবে অনেক ইসলামিক স্কলার নিয়তকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য মুখে উচ্চারণের অনুমতি দিয়েছেন।
১. রমযানের ফরয রোযার নিয়ত
نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ خَالِصًا لِلَّهِ تَعَالَى
উচ্চারণ: নাওয়াইতু সাওমা গাদিন মিন শাহরি রমাদান খালিসান লিল্লাহি তা’আলা।
অর্থ: আমি আগামীকাল রমযানের রোযা রাখার নিয়ত করলাম একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
২. নফল রোযার নিয়ত
نَوَيْتُ صَوْمَ هَذَا اليَوْمِ لِلَّهِ تَعَالَى
উচ্চারণ: নাওয়াইতু সাওমা হাযাল ইয়াওমি লিল্লাহি তা’আলা।
অর্থ: আমি আজকের এই নফল রোযা রাখার নিয়ত করলাম একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
নিয়ত সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণা
✅ মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়: নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্প। মুখে উচ্চারণ করা সুন্নাহ নয়, তবে ইচ্ছা করলে বলা যেতে পারে।
✅ প্রতিদিন নিয়ত করা জরুরি: পুরো রমযানের জন্য একবার নিয়ত করলেই চলবে—এমন ধারণা ভুল। প্রতিদিন আলাদাভাবে নিয়ত করতে হবে।
✅ নফল রোযার জন্য রাতের আগে নিয়ত আবশ্যক নয়: কেউ যদি সকাল পর্যন্ত কিছু না খায়, তাহলে দিনের মধ্যেও নফল রোযার নিয়ত করতে পারে।
উপসংহার
নিয়ত হলো সকল ইবাদতের মূল ভিত্তি। রোযার জন্য নিয়ত করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি অন্তরের একটি আমল, মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। ফরয রোযার জন্য ফজরের আগে এবং নফল রোযার জন্য দিনের মধ্যেও নিয়ত করা যায়। তাই আমাদের উচিত, নিয়তকে বিশুদ্ধ রাখা এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযা পালন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোযার নিয়ত করার তাওফিক দান করুন। আমীন!