Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
"SAFA DEEN: ইলমের আলোয় উদ্ভাসিত হোন, হিদায়াতের পথে এগিয়ে চলুন।"
রোযা কত প্রকার

রোযা কত প্রকার ও কি কি?

রোযা কত প্রকার ও কি কি? রোযা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধুমাত্র খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন প্রকারের রোযার আলোচনা পাওয়া যায়। মূলত, রোযাকে ফরয, ওয়াজিব, নফল এবং মাকরূহ ও হারাম – এই কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি রোযার বিশেষ কিছু বিধান ও গুরুত্ব রয়েছে।

রোযার প্রকারভেদ

১. ফরয রোযা

ফরয রোযা এমন রোযা যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। এটি পালন না করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ফরয রোযা তিন প্রকার:

ক. রমযানের রোযা

রমযান মাসের রোযা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মুসলমানের জন্য ফরয। এটি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ।

আল্লাহ বলেন:

“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন তাতে রোযা রাখে।”

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)

হাদিস:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের ওপর: (১) কালেমা পাঠ করা, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) রমযানের রোযা রাখা এবং (৫) হজ্জ করা।”

(সহিহ বুখারি: ৮)

খ. কাজা রোযা

যারা অসুস্থতা, সফর, মহিলাদের হায়েজ-নেফাস বা অন্য কোনো বৈধ কারণে রমযানের রোযা রাখতে পারেনি, তাদের জন্য পরে রোযা কাজা করা ফরয।

আল্লাহ বলেন:

“তোমাদের কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে, সে যেন অন্য কোনো দিনে সেই সংখ্যা পূরণ করে নেয়।”

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)

গ. মানত (প্রতিজ্ঞার) রোযা

যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো কাজ সফল হলে রোযা রাখার মানত করে, তবে তা পালন করা ফরয হয়ে যায়।

আল্লাহ বলেন:

“তারা মানত পূরণ করে এবং সেই দিনকে ভয় করে, যা হবে মহাবিপত্তির।”

(সূরা আল-ইনসান: ৭)

২. ওয়াজিব রোযা

ওয়াজিব রোযা ফরযের মতোই, তবে এটি নির্দিষ্ট কোনো শর্ত বা কারণে বাধ্যতামূলক হয়।

ক. কাফফারার রোযা

কিছু ভুল বা অপরাধের জন্য কাফফারাস্বরূপ রোযা রাখতে হয়। উদাহরণস্বরূপ:

রমযানের রোযা ভঙ্গের কাফফারা: যদি কেউ বিনা কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের রোযা ভঙ্গ করে, তবে তাকে ৬০ দিন একটানা রোযা রাখতে হবে।

যিহার (স্ত্রীকে মা বলার) কাফফারা: কেউ যদি স্ত্রীকে মা বলে সম্বোধন করে, তবে এর কাফফারা হিসেবে তাকে ৬০ দিন রোযা রাখতে হবে।

হত্যার কাফফারা: কেউ যদি ভুলবশত কাউকে হত্যা করে, তবে তাকে ৬০ দিন রোযা রাখতে হবে।

হাদিস:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের রোযা ভেঙে ফেলে, তবে তাকে পরপর ৬০ দিন রোযা রাখতে হবে, অন্যথায় ৬০ জন গরিবকে খাওয়াতে হবে।”

(সহিহ মুসলিম: ১১১১)

খ. শপথ ভঙ্গের রোযা

যদি কেউ কোনো শপথ ভঙ্গ করে, তবে তাকে তিন দিন রোযা রাখতে হবে অথবা দশজন গরিবকে খাওয়াতে হবে।

আল্লাহ বলেন:

“যদি কেউ শপথ করে এবং তা ভঙ্গ করে, তবে সে যেন তিন দিন রোযা রাখে।”

(সূরা আল-মায়িদা: ৮৯)

৩. নফল রোযা

নফল রোযা মানে স্বেচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযা রাখা। এটি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ এবং আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

ক. সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোর রোযা

১. সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযা – রাসূল ﷺ নিয়মিত সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।

হাদিস: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“সোম ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই যে, যখন আমার আমল পেশ করা হয়, তখন আমি রোযাদার থাকি।”

(সুনান তিরমিজি: ৭৪৭)

২. আরাফার দিনের রোযা (৯ই জিলহজ্জ) – এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়।

(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৩. আশুরার রোযা (১০ই মুহাররম) – এটি এক বছরের গুনাহ মাফ করে।

(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

খ. শাওয়ালের ছয় রোযা

রমযানের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখলে এক বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

রাসূল ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলো এবং তারপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখলো, সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো।”

(সহিহ মুসলিম: ১১৬৪)

গ. আইয়ামুল বীদ (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা)

প্রতিমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোযা রাখা সুন্নত।

রাসূল ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখবে, সে যেন সারাজীবন রোযা রাখলো।”

(সহিহ মুসলিম: ১১৬০)

৪. মাকরূহ ও হারাম রোযা

কিছু রোযা রয়েছে, যা রাখা নিষেধ বা অপছন্দনীয়।

ক. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোযা রাখা হারাম

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“তোমরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোযা রেখো না।”

(সহিহ মুসলিম: ১১৩৮)

খ. শুধু শুক্রবার বা শনিবারের রোযা

শুধুমাত্র শুক্রবার বা শনিবার রোযা রাখা মাকরূহ, তবে যদি অন্য কোনো দিনসহ রাখা হয়, তাহলে বৈধ। (সহিহ মুসলিম: ১১৪৪)

উপসংহার

রোযা শুধু ইসলামের একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, বরং এটি আত্মসংযম, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ফরয রোযা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব, আর নফল রোযা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম সুযোগ। তাই আমাদের উচিত, কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোযার প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করা এবং নিয়মিত রোযা পালন করা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে রোযার গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথভাবে তা পালনের তাওফিক দান করুন। আমীন!